আহ, ফ্রান্সের মনোমুগ্ধকর রেস্তোরাঁগুলো! যখন ফ্রান্সে পা রাখেন, সেখানকার সুস্বাদু খাবার আর পানীয়ের টানে মনটা ছটফট করে ওঠে, তাই না? আমার নিজেরও প্রথমবার ফ্রান্সে গিয়ে খাবার অর্ডার করতে গিয়ে বেশ মজার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন আমি কোনো ভাষার পরীক্ষায় বসেছি!
ফ্রেঞ্চ খাবারগুলো যেমন শিল্পসম্মত, তেমনি ফ্রেঞ্চ ভাষায় অর্ডার করাটাও একটা বিশেষ কায়দা। বিদেশি ভাষাভাষী হিসেবে রেস্তোরাঁয় খাবারের নাম দেখে দ্বিধা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। চিন্তা নেই, আজ আমরা এমন কিছু সহজ এবং কার্যকরী টিপস জানবো, যা দিয়ে আপনি কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই ফ্রেঞ্চ ভাষায় খাবার অর্ডার করতে পারবেন আর ফ্রেঞ্চ খাবারের আসল স্বাদ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন। এইবার আর কোনো ভুল হবে না!
চলুন, নিচে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ফরাসি মেনু বোঝার জাদুকাঠির ছোঁয়া

মেনুর গঠন আর লুকানো অর্থ: ভয়ের কিছু নেই!
ফরাসি রেস্তোরাঁয় যখন প্রথমবার গিয়েছিলাম, মেনু দেখে আমার চোখ কপালে উঠেছিল! মনে হচ্ছিল যেন এক গোপন কোড ভাষার সামনে বসেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একবার এই মেনুর গঠনটা বুঝে গেলে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। সাধারণত, ফরাসি মেনুতে তিনটে প্রধান ভাগ থাকে: ‘এঁট্রে’ (Entrée), ‘প্লা’ (Plat) এবং ‘দেসের’ (Dessert)। আমাদের দেশে আমরা ‘এঁট্রে’ বলতে বুঝি মূল খাবার, কিন্তু ফ্রান্সে এর মানে হলো স্টার্টার বা অ্যাপেটাইজার!
মানে হালকা কিছু খাবার, যেমন স্যুপ, সালাদ বা কোনো ছোট স্যান্ডউইচ। এরপর আসে আসল চমক, ‘প্লা’ বা ‘প্লা প্রান্সিপাল’ (Plat Principal) – এটাই হলো আপনার মূল খাবার। মাংস, মাছ, সবজি, পাস্তা – সব ধরনের মুখরোচক খাবার এই অংশে থাকে। আর সবশেষে থাকে ‘দেসের’ বা ডেজার্ট, মিষ্টিমুখ করার জন্য। একবার এক রেস্তোরাঁয় ‘এঁট্রে’ ভেবে একটা ছোট সালাদ অর্ডার করে ফেলেছিলাম, পরে যখন ‘প্লা’ এল, তখন আমার হাসির রোল থামছিল না!
তাই প্রথমবারই জেনে নিন, আপনার খাবারটি ‘এঁট্রে’ না ‘প্লা’। স্থানীয়রা প্রায়শই ‘প্লা দু জুর’ (Plat du Jour) বা ‘মেনু দু জুর’ (Menu du Jour) বেছে নেন, মানে দিনের বিশেষ খাবার বা দিনের বিশেষ মেনু, যা কিনা একদম তাজা আর স্থানীয় উপকরণে তৈরি হয়। মেনু পড়ার সময় খাবারের নামের পাশাপাশি নিচে দেওয়া ছোট ছোট বর্ণনাগুলো খুব মন দিয়ে দেখবেন। এতে কী কী উপাদান আছে, সেটা বুঝতে সুবিধা হবে এবং আপনার পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারবেন।
বিশেষ দিনের অফার: Plat du Jour এর আকর্ষণ
‘প্লা দু জুর’ আমার কাছে ফরাসি খাবারের এক অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। দিনের বিশেষ এই খাবারগুলো সাধারণত শেফ তার নিজের সৃজনশীলতা আর সেই দিনের সেরা উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন। আমি দেখেছি, প্রায়শই এই খাবারগুলো মেনুর অন্য খাবারের চেয়ে বেশি টাটকা এবং স্থানীয় স্বাদ বহন করে। একবার প্যারিসের একটি ছোট্ট ক্যাফেতে বসেছিলাম, তাদের ‘প্লা দু জুর’ ছিল বেকড কোড ফিশ, সাথে হালকা সবজি আর সুগন্ধি সস। আমি সাধারণত মাছ পছন্দ করি না, কিন্তু শেফের সুপারিশে সেটা অর্ডার করেছিলাম। বিশ্বাস করুন, আমার জীবনের সেরা মাছের খাবারের অভিজ্ঞতা ছিল সেটা!
এতটাই স্বাদু ছিল যে এখনো জিভে লেগে আছে। শুধু তাই নয়, দামও মেনুর অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশ সাশ্রয়ী ছিল। এটা এমন একটা সুযোগ যেখানে আপনি অপ্রত্যাশিতভাবে দারুণ কিছু আবিষ্কার করতে পারেন। এই ‘প্লা দু জুর’ সাধারণত এক বা দুই ডিশের প্যাকেজ হিসেবে পাওয়া যায়, কখনও কখনও ডেজার্টও এর সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই রেস্তোরাঁয় গিয়ে মেনু দেখার সময় অবশ্যই ‘প্লা দু জুর’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না। অনেক সময় এটা ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা থাকে বা ওয়েটার আপনাকে মৌখিকভাবে বলে দেন। এতে আপনি ফরাসি সংস্কৃতির একটা অংশকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন।
আত্মবিশ্বাসের সাথে ফরাসি শব্দে অর্ডার করার রহস্য
কয়েকটি জাদুর শব্দবন্ধ: আপনার হাতের মুঠোয়!
ফরাসি রেস্তোরাঁয় অর্ডার করার সময় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাষা। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই! কিছু সাধারণ ফরাসি শব্দ আর বাক্য শিখলেই আপনি অনায়াসে খাবার অর্ডার করতে পারবেন, আর ওয়েটাররাও আপনার প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হবেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রথমবার যখন প্যারিসে গিয়েছিলাম, সামান্য কিছু ফরাসি শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলাম, আর তাতে ওয়েটার এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে তিনি নিজেই আমার সাথে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা শুরু করলেন। ‘বঁজুর’ (Bonjour) দিয়ে অভিবাদন জানানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আপনি বলতে পারেন, ‘জে ভুড্রে’ (Je voudrais) যার অর্থ ‘আমি চাই…’। যেমন, ‘জে ভুড্রে আন কফে, সিল ভু প্লে’ (Je voudrais un café, s’il vous plaît) মানে ‘আমার একটি কফি লাগবে, দয়া করে’। খাবারের দাম জানতে চাইলে বলুন, ‘কম্বিয়ঁ সা কুত?’ (Combien ça coûte?), অর্থাৎ ‘এটার দাম কত?’ বিল চাইতে বলুন, ‘লা’অ্যাডিস্যোঁ, সিল ভু প্লে’ (L’addition, s’il vous plaît)। আর খাবার শেষে ‘মেরসি বকু’ (Merci beaucoup) মানে ‘অনেক ধন্যবাদ’ বলতে ভুলবেন না। এই ছোট ছোট বাক্যগুলো আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং আপনার ডাইনিং অভিজ্ঞতাকে অনেক বেশি আনন্দময় করে তুলবে।
সঠিক উচ্চারণ নয়, আন্তরিকতাই আসল কথা!
আমরা প্রায়শই ভয় পাই যে যদি ভুল উচ্চারণ করি, তাহলে কেমন দেখাবে! আমার প্রথমবার যখন ফরাসি ভাষায় অর্ডার করছিলাম, তখন আমার উচ্চারণ এতটাই অদ্ভুত ছিল যে ওয়েটার প্রথমে বুঝতে পারেননি। আমি নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম তিনি হাসিমুখে আমাকে সাহায্য করছেন, তখন বুঝলাম যে আন্তরিকতাই আসল কথা। ফরাসিরা বিদেশীদের ফরাসি বলার চেষ্টা দেখে খুব খুশি হন, এমনকি যদি উচ্চারণ নিখুঁত না হয়। তারা আপনার প্রচেষ্টাকে সম্মান করেন। তাই, ভুল হওয়ার ভয়ে চুপ করে থাকবেন না। যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মেনুতে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন। ‘আবে উন ক্যারাফ দ’ও’ (Avec une carafe d’eau, s’il vous plaît) মানে ‘এক গ্লাস ট্যাপ ওয়াটার দিন, দয়া করে’ – এটা বলে আপনি বোতলের পানির অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচতে পারেন, কারণ ফ্রান্সে ট্যাপ ওয়াটার পান করা নিরাপদ এবং বিনামূল্যে পরিবেশন করা হয়। মনে রাখবেন, আপনার হাসি আর আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিমা যে কোনো ভাষাগত বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে।
আপনার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার কৌশল
ছবিযুক্ত মেনু থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া
অনেক পর্যটক-বান্ধব রেস্তোরাঁয় ছবিযুক্ত মেনু থাকে, যা বিদেশীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ! বিশেষ করে যখন আপনি ফরাসি খাবারের নামগুলো বুঝতে পারছেন না, তখন ছবি দেখে অর্ডার করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার এক বন্ধু একবার ছবি দেখে এমন একটি খাবার অর্ডার করেছিল যা দেখতে খুবই লোভনীয় ছিল, কিন্তু স্বাদটা তার পছন্দ হয়নি। এর কারণ হলো, ছবি সবসময় আসল খাবারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেয় না। তবুও, এটি একটি ভালো শুরু হতে পারে। আপনি ছবি দেখে একটি ধারণা পেতে পারেন এবং তারপর ওয়েটারকে সেই খাবারের উপকরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি কোনো মাংসের পদ পছন্দ না করেন, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘এস-স’কু দে লা বিয়ঁদ?’ (Est-ce que c’est de la viande?) মানে ‘এটা কি মাংস?’। যদিও ছবিযুক্ত মেনু সবসময় সেরা রেস্তোরাঁয় নাও থাকতে পারে, তবুও এটি আপনার প্রথম দিকের ভয় কাটাতে সাহায্য করবে। তবে, আসল ফরাসি স্বাদ পেতে চাইলে, ছবির বাইরে গিয়ে মেনুর প্রতিটি শব্দকে বোঝার চেষ্টা করাটা জরুরি।
ওয়েটারের সাহায্য: আপনার সেরা বন্ধু!
ওয়েটাররা শুধু খাবার পরিবেশন করেন না, তারা মেনু সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্যও দিতে পারেন। দ্বিধা না করে তাদের সাহায্য চান। আপনি বলতে পারেন, ‘পুভে-ভু মে দেদে আ শোজির?’ (Pouvez-vous m’aider à choisir?) মানে ‘আপনি কি আমাকে বেছে নিতে সাহায্য করতে পারেন?’ অথবা ‘কোয়েল এ ভট্রে প্লে প্রেফেরে?’ (Quel est votre plat préféré?) মানে ‘আপনার প্রিয় খাবার কোনটি?’ আমার মনে আছে, একবার এক রেস্তোরাঁয় আমি দ্বিধায় ভুগছিলাম কী অর্ডার করব, তখন ওয়েটারকে তার পছন্দের একটা খাবার জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি এমন একটি খাবারের নাম বললেন যা আমি হয়তো কখনোই অর্ডার করতাম না, কিন্তু সেটা এতই অসাধারণ ছিল যে আমি এখনো তার কথা ভাবি। ওয়েটাররা সাধারণত সেই দিনের সেরা খাবার বা নতুন কোনো পদ সম্পর্কে ভালো জানেন। তারা আপনার রুচি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন, যেমন, ‘ভু প্রেফেরেজ লা বিয়ঁদ উ ল পোয়াসঁ?’ (Vous préférez la viande ou le poisson?) মানে ‘আপনি মাংস পছন্দ করেন নাকি মাছ?’ তখন আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী উত্তর দিতে পারেন। তাদের পরামর্শ মেনে চললে আপনি ফরাসি খাবারের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবেন।
ফরাসি টেবিলে বসার আদবকেতা: আপনি কী জানতেন?
শান্ত পরিবেশ আর ধীরগতির খাবার উপভোগ
ফরাসিরা তাড়াহুড়ো করে খাবার খায় না। তাদের কাছে খাবার মানে শুধু পেট ভরা নয়, এটা একটা সামাজিক অভিজ্ঞতা, একটা শিল্প। আমি দেখেছি, ফ্রান্সে রেস্তোরাঁয় গেলে লোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে গল্প করে, ওয়াইন খায় আর ধীরে ধীরে খাবার উপভোগ করে। এটা আমাদের দেশের তাড়াহুড়ো করে খাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেশ আলাদা। প্রথম প্রথম আমার মনে হতো, এত সময় কেন লাগছে?
কিন্তু ধীরে ধীরে আমিও এই ধীরগতির মধ্যে এক ধরনের শান্তি খুঁজে পেলাম। আপনার প্লেটে খাবার পরিবেশন করার পর সাথে সাথেই ছুরি-কাঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পরিবেশটা উপভোগ করুন। বন্ধুদের সাথে গল্প করুন। যখন সবাই খাবার পাবেন, তারপর একসাথে খাওয়া শুরু করুন। ফরাসি টেবিলে বসে কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলবেন না বা হাসাহাসি করবেন না, এতে অন্য অতিথিদের বিরক্ত হতে পারে। তারা সাধারণত শান্ত এবং মার্জিত পরিবেশে খেতে পছন্দ করেন। আপনিও সেই পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার ডাইনিং অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
বিশেষ কিছু ছোট নিয়ম যা আপনার জানা দরকার
ফরাসি ডাইনিং টেবিলে কিছু ছোট ছোট নিয়মকানুন আছে যা মেনে চললে আপনি স্থানীয়দের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবেন। যেমন, আপনার ন্যাপকিনটি সবসময় আপনার কোলে রাখুন। খাবার টেবিলে কখনই আপনার কনুই রাখবেন না। যখন খাওয়া শেষ হয়, আপনার ছুরি এবং কাঁটাচামচ প্লেটের ডান পাশে সমান্তরালভাবে রাখুন, এর মানে হল আপনি খাওয়া শেষ করেছেন। ব্রেড বা রুটি কখনই আপনার প্লেটে রাখা হয় না, এটি টেবিলে বা আপনার বাম পাশে ছোট প্লেটে রাখা হয়। যদি আপনি কোনো কারণে টেবিল ছেড়ে যান, তবে আপনার ন্যাপকিনটি চেয়ারের উপর রাখুন, কখনোই টেবিলে রাখবেন না। আর, ফরাসিরা খাবারের পর কখনোই ‘চিয়ার্স’ বলার মতো ‘গণ্যস্বাস্থ্য’ বা ‘চিয়ার্স’ বলে না; তারা ‘বঁ আপেতি’ (Bon appétit) বলে, যার অর্থ ‘ভালোভাবে উপভোগ করুন’। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি শুধু একজন পর্যটক হিসেবে নয়, ফরাসি সংস্কৃতির একজন অংশ হিসেবে পরিচিত হবেন।
পানীয় নির্বাচন: ওয়াইন থেকে ক্যাফে পর্যন্ত

সঠিক ওয়াইন বেছে নেওয়ার সহজ উপায়
ফরাসি খাবারের সাথে ওয়াইন যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওয়াইনের সুবিশাল মেনু দেখে ভয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আমার প্রথমবার প্যারিসে গিয়ে ওয়াইন অর্ডার করার অভিজ্ঞতা ছিল এক দুঃস্বপ্ন!
এত ধরনের ওয়াইন, কোনটার সাথে কী মানায়, কিছুই বুঝতাম না। তবে একটা সহজ বুদ্ধি হলো, ওয়েটারের কাছে জিজ্ঞেস করা। আপনি আপনার পছন্দের খাবার বলার পর ওয়েটারকে বলতে পারেন, ‘কোয়েল ভ্যাঁ রেকমঁদে-ভু আভেক সে প্লাত?’ (Quel vin recommandez-vous avec ce plat?) মানে ‘এই খাবারের সাথে আপনি কোন ওয়াইনের সুপারিশ করেন?’ সাধারণত, সাদা মাংস বা মাছের সাথে সাদা ওয়াইন এবং লাল মাংসের সাথে লাল ওয়াইন বেশি ভালো মানায়। যদি আপনি ওয়াইন সম্পর্কে তেমন কিছু না জানেন, তাহলে ‘ভ্যাঁ দু মেজো’ (Vin du Maison) বা ‘হাউস ওয়াইন’ অর্ডার করতে পারেন, এটা সাধারণত রেস্তোরাঁর নিজস্ব ওয়াইন এবং বেশিরভাগ সময় ভালো হয় আর দামও কম হয়। ভয়ের কিছু নেই, আপনি শুধু আপনার পছন্দের স্বাদ সম্পর্কে বলুন (যেমন মিষ্টি, শুকনো, হালকা), ওয়েটার আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন।
কফি সংস্কৃতির নিজস্বতা: ফরাসি স্টাইলে কফি উপভোগ
ফ্রান্সের কফি সংস্কৃতি আমাদের থেকে কিছুটা আলাদা। তারা সাধারণত খাবারের পর ‘ক্যাফে এস্প্রেসো’ (Café Espresso) পছন্দ করেন, যা আকারে ছোট হলেও স্বাদে দারুণ শক্তিশালী। আমার এক ফরাসি বন্ধু আমাকে শিখিয়েছিল যে ফ্রান্সে দুপুরের বা রাতের খাবারের পর ক্যাফে ল্যাটে বা ক্যাপুচিনো অর্ডার করাটা খুব একটা প্রচলিত নয়, সেগুলো সাধারণত সকালের নাস্তার জন্য বেশি জনপ্রিয়। একবার আমি দুপুরবেলা ক্যাফে ল্যাটে অর্ডার করেছিলাম, ওয়েটার তখন একটু হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘সকালে নাস্তার জন্য খুঁজছেন বুঝি?’ তখন আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি!
যদি আপনি হালকা কফি পছন্দ করেন, তাহলে ‘ক্যাফে অলোঁজে’ (Café Allongé) বা লং কফি চাইতে পারেন, যেটা এস্প্রেসোর সাথে গরম পানি মিশিয়ে তৈরি হয়। দুধের কফি চাইলে ‘ক্যাফে ও লে’ (Café au Lait) বলতে পারেন। আর ঠাণ্ডা কফির ধারণা ফ্রান্সে ততটা জনপ্রিয় নয়, তাই আপনি ঠাণ্ডা কফি হয়তো সব জায়গায় নাও পেতে পারেন।
বিশেষ প্রয়োজন বা অ্যালার্জি থাকলে কী করবেন?
খাবারের উপকরণ সম্পর্কে জানতে দ্বিধা করবেন না
আপনার যদি কোনো খাবারের প্রতি অ্যালার্জি থাকে বা আপনি নিরামিষাশী হন, তাহলে সেটা আগে থেকেই ওয়েটারকে জানানো খুবই জরুরি। ফ্রান্সে অনেক রেস্তোরাঁ এখনো অ্যালার্জি নিয়ে ততটা সচেতন নয়, যেমনটা আমরা অন্যান্য আধুনিক দেশে দেখতে পাই। একবার আমার এক নিরামিষাশী বন্ধু ভুল করে এমন একটি স্যুপ অর্ডার করেছিল যাতে চিকেন স্টক ছিল, যদিও মেনুতে তা উল্লেখ করা ছিল না। তাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সরাসরি ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করা। আপনি বলতে পারেন, ‘জে সুইস ভেজিটেরিয়ঁ’ (Je suis végétarien) মানে ‘আমি নিরামিষাশী’ বা ‘জে ন ম্যাঁজ পা দে বিয়ঁদ’ (Je ne mange pas de viande) মানে ‘আমি মাংস খাই না’। যদি আপনার কোনো নির্দিষ্ট উপকরণের প্রতি অ্যালার্জি থাকে, যেমন বাদাম বা গ্লুটেন, তাহলে স্পষ্ট করে বলুন, ‘জে সুইস অ্যালার্জিক আউক্স আরাকিড’ (Je suis allergique aux arachides) মানে ‘আমার বাদামে অ্যালার্জি আছে’ বা ‘জে সুইস অ্যালার্জিক ও গ্লুটেন’ (Je suis allergique au gluten)। অনেক ক্ষেত্রে তারা আপনার জন্য খাবার কাস্টমাইজ করে দিতে পারেন। একটু সচেতন থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে ফরাসি খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।
ধর্মীয় বা খাদ্যাভ্যাসগত সীমাবদ্ধতা: কীভাবে মানিয়ে চলবেন?
শুধুমাত্র অ্যালার্জি নয়, ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত খাদ্যাভ্যাসগত সীমাবদ্ধতাও থাকতে পারে। যেমন, যদি আপনি পর্ক বা গরুর মাংস না খান, তাহলে সেটা স্পষ্ট করে জানাতে হবে। আপনি বলতে পারেন, ‘জে ন ম্যাঁজ পা দে পর্স’ (Je ne mange pas de porc) বা ‘জে ন ম্যাঁজ পা দে বিয়ঁদ দে বফ’ (Je ne mange pas de viande de bœuf)। অনেক ফরাসি রেস্তোরাঁয় যদিও হালাল বা কোশার খাবার সব সময় পাওয়া যায় না, তবুও বড় শহরগুলোতে কিছু রেস্তোরাঁয় বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে পারে। তাই রেস্তোরাঁয় যাওয়ার আগে ফোন করে জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ফরাসিরা খুবই অতিথিপরায়ণ এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন মেটানোর জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। শুধু আপনাকে তাদের সাথে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। নিচে কিছু সাধারণ ফরাসি শব্দ ও তার অর্থ দেওয়া হলো যা আপনাকে রেস্তোরাঁয় অর্ডার করতে সাহায্য করবে:
| ফরাসি শব্দ/বাক্য | বাংলা অর্থ |
|---|---|
| Bonjour | নমস্কার/শুভ সকাল |
| S’il vous plaît | দয়া করে |
| Merci beaucoup | অনেক ধন্যবাদ |
| L’addition, s’il vous plaît | বিলটা দিন, দয়া করে |
| Je voudrais… | আমি… চাই |
| Végétarien(ne) | নিরামিষাশী |
| Sans gluten | গ্লুটেন-মুক্ত |
| De l’eau | পানি |
| Café | কফি |
| Vin | ওয়াইন |
ফরাসি রেস্তোরাঁর বিল এবং টিপস: বিভ্রান্তি দূর করুন
বিল পরিশোধের নিয়ম এবং সার্ভিস চার্জের লুকানো গল্প
ফরাসি রেস্তোরাঁয় বিল পরিশোধ করার ব্যাপারটা আমাদের দেশের থেকে কিছুটা ভিন্ন। এখানে প্রায়শই সার্ভিস চার্জ (Service Compris) বিলের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে। অর্থাৎ, আপনাকে আলাদা করে টিপস দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, কারণ ওয়েটারদের বেতন বিলের এই সার্ভিস চার্জ থেকেই দেওয়া হয়। প্রথমবার যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, তখন আমি বিলের উপর আলাদা করে টিপস দিতে যাচ্ছিলাম, তখন ওয়েটার আমাকে বিনীতভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে এর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে, যদি আপনার মনে হয় যে ওয়েটারের সার্ভিস খুবই চমৎকার ছিল এবং আপনি তাকে অতিরিক্ত কিছু দিতে চান, তাহলে ২-৫ ইউরোর মতো ছোট টিপস দিতে পারেন। এটি একটি ঐচ্ছিক বিষয়, বাধ্যতামূলক নয়। বিল চাওয়ার জন্য আপনি বলতে পারেন, ‘লা’অ্যাডিস্যোঁ, সিল ভু প্লে’ (L’addition, s’il vous plaît)। তারা বিলটি আপনার টেবিলে এনে দেবে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করাটা খুব সাধারণ, তবে ছোট ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় ক্যাশ পেমেন্টেরও প্রয়োজন হতে পারে।
টিপস দেওয়া না দেওয়া: কখন কত দেবেন?
যেমনটি আগে বললাম, ফ্রান্সে টিপস দেওয়াটা আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের মতো বাধ্যতামূলক বা প্রত্যাশিত নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যদি সার্ভিসটা অসাধারণ হয় এবং ওয়েটার সত্যিই অনেক চেষ্টা করেন আপনাকে সন্তুষ্ট করতে, তাহলে টেবিলে কিছু খুচরো পয়সা রেখে যাওয়াটা এক ধরনের প্রশংসা হিসেবে বিবেচিত হয়। ধরুন, আপনি ৫ ইউরোর কম কিছু টিপস দিতে চান, তখন আপনি বিলের উপর বাকি খুচরো টাকা রেখে যেতে পারেন। এটি এমন নয় যে ওয়েটার আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে কিছু পাবে কিনা। তারা তাদের বেতন পান এবং এর জন্য অপেক্ষা করেন না। এটি শুধু আপনার কৃতজ্ঞতার প্রতীক। ট্যাক্সিতে বা বারেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। যদি সার্ভিস দারুণ হয়, তাহলে কিছু অতিরিক্ত টাকা দেওয়াটা আপনার উদারতা। তবে কখনোই অতিরিক্ত বা জোর করে টিপস দেবেন না, কারণ এটি তাদের সংস্কৃতিতে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তাই, টিপস নিয়ে আর কোনো দ্বিধা নয়, আপনার খুশি অনুযায়ী দিন।
লেখা শেষ করছি
ফরাসি রেস্তোরাঁর রহস্যময় মেনু আর তাদের আদবকেতা, প্রথমদিকে একটু ভয়ের মনে হলেও আসলে এগুলো ফরাসি সংস্কৃতির এক অপূর্ব অংশ। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, একবার এই ছোট ছোট বিষয়গুলো জেনে গেলে আপনার ডাইনিং অভিজ্ঞতাটাই সম্পূর্ণ বদলে যায়। আপনি শুধু খাবার খান না, বরং একটা নতুন সংস্কৃতিকে উপভোগ করেন। তাই আর দেরি না করে, এই টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে আপনার পরবর্তী ফরাসি খাবারের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করে তুলুন। বিশ্বাস করুন, ফরাসি রেস্তোরাঁয় আত্মবিশ্বাসের সাথে খাবার অর্ডার করার যে আনন্দ, তার তুলনা হয় না!
জেনে রাখলে কাজে আসবে এমন কিছু টিপস
১. রেস্তোরাঁয় ঢোকা বা বেরোনোর সময় অবশ্যই ‘বঁজুর’ (Bonjour) বলে অভিবাদন জানাবেন, এতে স্থানীয়রা আপনার প্রতি বেশ খুশি হবেন।
২. ‘এঁট্রে’ মানে স্টার্টার আর ‘প্লা’ মানে মূল খাবার – এই পার্থক্যটা জেনে রাখলে ভুল করে ছোট খাবার অর্ডার করার ঝুঁকি থাকবে না।
৩. ওয়েটারকে আপনার পছন্দের খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে দ্বিধা করবেন না বা ‘প্লা দু জুর’ (Plat du Jour) সম্পর্কে খোঁজ নিন, এতে আপনি দিনের সেরা খাবারটি পেতে পারেন।
৪. খাবারের টেবিলে আপনার ন্যাপকিনটি সবসময় কোলে রাখুন এবং কখনোই কনুই টেবিলে রাখবেন না – এই ছোট বিষয়গুলো ফরাসি আদবকেতার অংশ।
৫. যদি আপনার কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকে বা আপনি নিরামিষাশী হন, তাহলে শুরুতেই ওয়েটারকে স্পষ্ট করে জানান, এতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক নজরে
ফরাসি রেস্তোরাঁয় খাবারের অভিজ্ঞতা আমাদের সংস্কৃতির থেকে বেশ কিছুটা আলাদা, যেখানে তাড়াহুড়োর বদলে খাবার উপভোগকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। মেনু বোঝার জন্য কিছু সাধারণ ফরাসি শব্দ জানা এবং ওয়েটারদের সাথে খোলাখুলি কথা বলা আপনাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ‘এঁট্রে’ ও ‘প্লা’-এর মতো প্রধান খাবারের ধরন বোঝা, ‘প্লা দু জুর’-এর মতো বিশেষ অফারগুলো খেয়াল রাখা, এবং আপনার পছন্দ বা অ্যালার্জি সম্পর্কে আগে থেকেই জানানোটা খুবই জরুরি। বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে সাধারণত সার্ভিস চার্জ বিলের সাথে যুক্ত থাকে, তাই অতিরিক্ত টিপস দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়, বরং আপনার ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। ওয়াইন এবং কফি সংস্কৃতির নিজস্বতা বুঝে অর্ডার করলে আপনার ফরাসি ডাইনিং অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে। মনে রাখবেন, আত্মবিশ্বাস এবং আন্তরিকতা ভাষার বাধাকে অতিক্রম করে একটি সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে সাহায্য করবে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি শুধু একজন ভোজনরসিক হিসেবেই নয়, ফরাসি সংস্কৃতির একজন সংবেদনশীল অংশীদার হিসেবেও সম্মানিত হবেন, আর আপনার ভ্রমণ হয়ে উঠবে আরও স্মরণীয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ফ্রেঞ্চ মেনু দেখে আমি তো কিছুই বুঝতে পারি না! মেনুটা কিভাবে সহজে বুঝে খাবার অর্ডার করবো?
উ: আরে, এটা নিয়ে একদমই ঘাবড়াবেন না! আমারও প্রথমবার একই অবস্থা হয়েছিল। ফ্রেঞ্চ মেনু দেখে মনে হতো যেন এক রহস্যময় ধাঁধার বই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, কিছু ছোট কৌশল জানলে মেনুটা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রথমে যেটা করতে পারেন, সেটা হলো গুগলের ট্রান্সলেট অ্যাপ বা কোনো ডিকশনারি অ্যাপ হাতের কাছে রাখা। রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত ওয়াইফাই থাকে, না থাকলেও অফলাইন ট্রান্সলেশন কাজ করবে। মেনুতে থাকা মেইন কোর্সের নামগুলোর পাশে দেখবেন ছোট করে কিছু উপকরণের নাম লেখা থাকে – যেমন ‘Poulet’ মানে চিকেন, ‘Poisson’ মানে মাছ, ‘Bœuf’ মানে গরুর মাংস। এগুলো চিনে রাখলেই অনেকটাই কাজ সহজ হয়ে যায়।আরেকটা মজার টিপস দিই, যদি কোনো ডিশের নাম খুব আকর্ষণীয় মনে হয় কিন্তু অর্থ বুঝতে না পারেন, তাহলে সেখানকার ওয়েটারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তারা খুবই সাহায্যপ্রবণ হন। “Qu’est-ce que c’est?” (কেস-ক সে?) মানে “এটা কী?” বা “Pouvez-vous me décrire ce plat?” (পুভে-ভু ম ডেক্রির সে প্লা?) মানে “আপনি কি এই পদটি বর্ণনা করতে পারবেন?” – এই সহজ প্রশ্নগুলো করেই দেখুন না!
তারা আপনাকে ডিশের ভেতরের সব গল্প বলে দেবে। অনেক সময় রেস্তোরাঁর বাইরে অথবা তাদের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে মেনুও থাকে, ঢোকার আগে একবার দেখে নিতে পারেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন আমি নিজে এমন করে জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম, তখন শুধু খাবারই বুঝিনি, ফ্রেঞ্চ সংস্কৃতির সাথেও আরও বেশি জড়িয়ে পড়েছিলাম!
এই টিপসগুলো মেনে চললে দেখবেন, ফ্রেঞ্চ মেনু আর আপনার কাছে কোনো বিভীষিকা থাকবে না, বরং প্রতিটা খাবার একটা নতুন আবিষ্কারের আনন্দ দেবে।
প্র: ফ্রেঞ্চ রেস্তোরাঁয় খাবার অর্ডার করার জন্য কিছু সাধারণ কিন্তু কার্যকর ফ্রেঞ্চ বাক্য শিখিয়ে দিন।
উ: একদম ঠিক ধরেছেন! কিছু বেসিক ফ্রেঞ্চ বাক্য জানা থাকলে আপনার রেস্তোরাঁর অভিজ্ঞতা অনেক সহজ আর আনন্দময় হবে। সত্যি বলতে কি, আমি যখন প্রথমবার ফ্রান্সে গিয়েছিলাম, তখন কিছু সাধারণ বাক্য মুখস্থ করে গিয়েছিলাম। কাজটা দারুণ হয়েছিল!
এখানে আমি কিছু বাক্য দিচ্ছি যেগুলো আপনি অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন:”Bonjour!” (বঁজূর!) – শুভ সকাল/শুভ দিন! (রেস্তোরাঁয় ঢুকলেই বলুন, খুবই ভালো ইম্প্রেশন তৈরি হবে।)
“Bonsoir!” (বঁসোয়ার!) – শুভ সন্ধ্যা!
(সন্ধ্যার পর ঢুকলে বলুন।)
“Une table pour deux, s’il vous plaît.” (উন তাব্ল পোর দ্যু, সিল ভু প্লে।) – দুজনের জন্য একটি টেবিল, দয়া করে। (যদি রিজার্ভেশন না থাকে।)
“Je voudrais commander…” (জ ভুদ্রে কমাঁদে…) – আমি অর্ডার করতে চাই…
(এর পরে আপনার খাবারের নাম বলুন।)
“Je prends…” (জ প্রা…) – আমি নেবো… (এটাও অর্ডার করার আরেকটি সহজ উপায়।)
“L’addition, s’il vous plaît.” (লাদিসিওঁ, সিল ভু প্লে।) – বিলটা দিন, দয়া করে।
“Merci beaucoup!” (মেরসি বোকু!) – অনেক ধন্যবাদ!
“Au revoir!” (ও রেভুয়া!) – বিদায়! আমার একটা অভিজ্ঞতা বলি, একবার একটা ছোট ক্যাফেতে স্যান্ডউইচ অর্ডার করতে গিয়ে শুধু “Bonjour, un sandwich au jambon, s’il vous plaît.” (বঁজূর, আঁ স্যান্ডউইচ ও জাবোঁ, সিল ভু প্লে।) – শুভ সকাল, একটি হ্যাম স্যান্ডউইচ, দয়া করে – এইটুকু বলেই একদম কেল্লাফতে!
ওয়েটার এতটাই খুশি হয়েছিল যে হাসি মুখে বাড়তি একটা মিষ্টিও দিয়েছিল! এই বাক্যগুলো আপনাকে শুধু খাবার অর্ডার করতেই সাহায্য করবে না, স্থানীয় মানুষের সাথে একটা সুন্দর সংযোগও তৈরি করে দেবে। চেষ্টা করে দেখুন, আমি নিশ্চিত আপনিও এমন মজার অভিজ্ঞতা পাবেন!
প্র: যদি আমার কোনো নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি থাকে বা আমি নিরামিষাশী হই, তাহলে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কিভাবে সেটা জানাবো?
উ: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন, কারণ স্বাস্থ্যের ব্যাপার! অ্যালার্জি বা বিশেষ খাদ্যাভ্যাস থাকলে সেটা রেস্তোরাঁকে আগেভাগে জানানো অত্যন্ত জরুরি। ফ্রান্সে খাদ্য সংস্কৃতি খুব উন্নত, তাই তারা এই ব্যাপারে বেশ সংবেদনশীল। আমার এক বন্ধু বাদামের অ্যালার্জি নিয়ে ফ্রান্সে ঘুরতে গিয়েছিল। প্রথমে একটু ভয় পেলেও, সঠিক ফ্রেঞ্চ বাক্য ব্যবহার করে সে খুবই ভালো অভিজ্ঞতা পেয়েছিল।আপনার জন্য কিছু জরুরি বাক্য দিচ্ছি:”Je suis allergique à…” (জ সুইজ আলার্জি আ…) – আমার অ্যালার্জি আছে…
…les cacahuètes (লে কাকাহুয়েত) – বাদাম
…le gluten (ল গ্লুটেন) – গ্লুটেন
…les produits laitiers (লে প্রদুই লেতিয়ে) – দুগ্ধজাত পণ্য
…les fruits de mer (লে ফুইত দে মের) – সামুদ্রিক খাবার
“Est-ce que ce plat contient…?” (এস-ক সে প্লা কঁতিয়্যাঁ…?) – এই খাবারে কি…
আছে? “Je suis végétarien(ne).” (জ সুই ভেজেতারিয়্যাঁ/ভেজেতারিয়েন।) – আমি নিরামিষাশী। (পুরুষ হলে ‘végétarien’, মহিলা হলে ‘végétarienne’ বলুন।)
“Je ne mange pas de viande.” (জ ন মঁজ পা দ্য ভিয়্যাঁদ।) – আমি মাংস খাই না।
“Je ne mange pas de poisson.” (জ ন মঁজ পা দ্য পোয়াসোঁ।) – আমি মাছ খাই না।যখন অর্ডার করবেন, তখন বিনয়ের সাথে আপনার অ্যালার্জির কথা বা খাদ্যাভ্যাসের কথা বলুন। যেমন, “Bonjour, je suis allergique aux cacahuètes.
Est-ce que ce plat contient des cacahuètes?” (বঁজূর, জ সুইজ আলার্জি ও কাকাহুয়েত। এস-ক সে প্লা কঁতিয়্যাঁ দে কাকাহুয়েত?) – শুভ সকাল, আমার বাদামে অ্যালার্জি আছে। এই খাবারে কি বাদাম আছে?
দেখবেন, তারা আপনাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করবে এবং প্রয়োজনে বিকল্প খাবারের পরামর্শও দেবে। অনেক রেস্তোরাঁয় এখন অ্যালার্জির তালিকা মেনুতেই উল্লেখ করা থাকে। তাই একদম নিশ্চিন্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার অর্ডার করতে পারবেন। কোনো দ্বিধা রাখবেন না, আপনার সুস্থতা সবার আগে!






